মঙ্গলবার, ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাজীগঞ্জে স্বামীর ঘর ছেড়ে প্রেমিকের ঘরে গৃহবধূ!  

বিশেষ প্রতিবেদক, চাঁদপুর 


চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে স্বামীর ঘর ছেড়ে বাল্যকালের প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে এসে সংসার পেতেছে রাবেয়া আক্তার (২৬) নামে এক সন্তানের জননী গৃহবধূ।ঘর ছাড়ার পরই দেনমোহর আদায় করতে আদালতে গিয়ে স্বামী  শ্বাশুড়ি ননদ সহ দেবরের বিরুদ্ধে দুটি মামলা ঠুকে দিয়েছেন এই গৃহবধূ।মামলা করেই পরবর্তীতে প্রেমিকের সাথে হাজীগঞ্জের একটি ভাড়া বাসায় উঠেন রাবেয়া। সেই গৃহবধু রাবেয়া এখন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা এমন গুঞ্জন পুরো এলাকাজুড়ে। স্বামীকে তালাক না দিয়েই গৃহবধূ রাবেয়া এখন প্রেমিকের সংসার করছেন এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে গা ঢাকা দেয় চতুর গৃহবধূ রাবেয়া।


দেনমোহর আদায় করতে আদালতে দুই মামলা 


ঘটনাটি ঘটেছে হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭ নং পশ্চিম বড়কুল ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের গোবিন্দপুর দক্ষিণ মোল্লা বাড়িতে। গৃহবধু রাবেয়া পাশ্ববর্তী গোবিন্দপুর মুন্সি বাড়ির দেলোয়ার হোসেন মুন্সির মেয়ে।রাবেয়া ৫ ভাই চার বোনের মধ্যে সবার ছোট। বর্তমানে রাবেয়া তাঁর বড় বোন আমেনার হাজীগঞ্জ বাজারস্থ  হলুদ পট্টির ভাড়া বাসায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।অপরদিকে একই গ্রাম গোবিন্দপুর দক্ষিণ মোল্লা বাড়ির শরীফ উদ্দিন পাটওয়ারীর (দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা) প্রথম স্ত্রীর সন্তান বিদেশ প্রবাসী বাল্যকালের প্রেমিক রাজীব। রাজীবের ঘরে এখন তৃতীয় নম্বর সৎ মা থাকায় রাজীব প্রেমিকা রাবেয়াকে নিয়ে হাজীগঞ্জে অবস্থান করছেন।যদিও রাবেয়া তাঁর আগের স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেই রাজিবের বাড়িতে কয়েকদিন অবস্থান করেছেন বলে স্বীকার করেছেন রাজীবের সৎ মা মাহমুদা ও এলাকার মানুষজন।
জানা গেছে,২০১৬ সালের আগষ্ট  মাসে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক হাজীগঞ্জ উপজেলার ৮ নং হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের প্রয়াত মেজবাহ উদ্দিন মাস্টারের বড় ছেলে তারেকের আহম্মেদ (৩২) এর সাথে ৩ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে পঞ্চাশ হাজার টাকা ওয়াসিলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় রাবেয়া। বিবাহের পর থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিলো। দাম্পত্য জীবনে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তাসফিয়া ইসলাম সেতু (৫)নামে তাদের একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।২০১৯ সালের জুন মাসে  রাবেয়ার শুশুর মেজবাহ উদ্দিন মাস্টার মারা যায়।এরই মধ্যে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে পরকীয়া প্রেমিকের ইন্ধনে রাবেয়া স্বামী তারেক আহম্মেদ এর ঘর থেকে কন্যা সন্তানসহ পালিয়ে যায়।পালিয়ে গিয়ে বাবেয়া তাঁর স্বামী তারেক আহম্মেদ,দেবর জাহিদ হাসান(২৫),শ্বাশুড়ি ফাতেমা বেগম (৫০) ননদ ও ননদের জামাই সহ ছয় জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০( সংশোধিত ২০০৩)এর ১১(গ)/৩০ ধারার বিধান মতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যাল আদালত,চাঁদপুর এ মামলা করে (যার নং ১৮০/২০২০)।এই মামলায় হাজীগঞ্জ উপজেলার বলিয়া গ্রামের জনৈক শাখাওয়াত হোসেন ও হাজীগঞ্জ উপজেলার ৯ নং গন্ধব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের তারালিয়া গ্রামের চান্দের বাড়ির আবদুল মান্নান নামে দুই জনকে স্বাক্ষী করা হয়।মামলার স্বাক্ষী শাখাওয়াত হোসেনের হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ান রাবেয়ার ভাই রেজাউল ও তাঁর শ্বশুর আবদুল মান্নান  দুই পরিবারের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার মাস্টারমাইন্ড বলে অভিযোগ উঠে।রেজাউলের শ্বশুর  জনৈক আবদুল মান্নানের কারণেই দুটি পরিবার আজ ধব্বংসের দ্বারপ্রান্তে এমন অভিযোগ উঠে। রাজীবের পরিবারের জালিয়াতি আর বিয়ে বাণিজ্য সহ অনৈতিক কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ অনেকেই এখন সর্বশান্ত বলেও অভিযোগ রয়েছে।
  হাজীগঞ্জ উপজেলার ৮ নং হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান  জলিলুর রহমান মির্জা বিষয়টি মিমাংসা করার চেষ্টা করেন।এক পর্যায়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিষয়টি তালাক মিমাংসার মাধ্যমে সমাধানে রাজি হয় উভয়পক্ষ। রাবেয়ার স্বামী তারেকের পরিবারও বিষয়টি মেনে নিয়ে টাকা পরিশোধ করতে সময় চান শালিশীদের কাছে।এই সময় দেওয়াকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে আর বিষয়টি মিমাংসা না হওয়ায় রাবেয়া শালিসীদের বিচার না মেনেই সেখান থেকে চলে যায়।অভিযোগ রয়েছে সাবেক চেয়ারম্যানের ঘুষ বাণিজ্যের কারণে শেষ পর্যন্ত ঘটনাটি মিমাংসা হয়নি।এভাবেই প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হয়।এরই মধ্যে উভয়পক্ষের লোকজন জেল খাটে।রাবেয়ার স্বামী তারেকের ছোট ভাই জাহিদ ২৭ দিন জেল খাটে।রাবেয়ার পক্ষের একজনও জেলে যায় তারেকের পরিবারের দায়ের করা মামলায়।
জেল খাটার রেষারেষিতে রাবেয়া আক্তার তাঁর দেনমোহর,খোরপোষ ও তাঁর নাবালিকা মেয়ের ভরণপোষণ ও লেখাপড়ার খরচ বাবদ ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩২ টাকা বিবাদী তারেক আহম্মেদ থেকে আদায়ের নিমিত্তে বিজ্ঞ হাজীগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালত,চাঁদপুর এ দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করে। যার নম্বর ১/২০২১ ইং।
২০২৩ সালে বিষয়টি মিমাংসার জন্য চাঁদপুরে উভয়পক্ষের দুই জন বিজ্ঞ আইনজীবী আন্তরিক হয়ে পদক্ষেপ নেন। সেখানে রাবেয়াকে হাজির করা হয়নি রহস্যজনক কারণে। এলাকার লোকজনের ভাষ্যমতে, রাবেয়া পরকীয়া প্রেমিকের সংসার করে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে।যার কারণে এই শালিস বৈঠকে সে উপস্থিত হতে পারেনি।
এরই সূত্রধরে রাবেয়ার পরকীয়া প্রেমিকের সাথে বিয়ে,বিয়ের পর রাজীবের বাড়িতে অবস্থান,এলাকার মানুষের নিন্দা থেকে বাঁচতে বোনের বাসায় আশ্রয় নেয়ার সত্যতা অনুসন্ধান করা হয়।অনুসন্ধানে একে একে বেরিয়ে আসে থলের বেড়াল। এলাকায় রাবেয়ার অবৈধ কুকীর্তির কথা মানুষের মুখে মুখে রটে যায়।কুকীর্তি ফাঁস হওয়ার পর রাবেয়া চলে যান লোকচক্ষুর আড়ালে।সুবিচার পেতে সহায়তার জন্য তারেক আহম্মেদ এর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে নড়েছড়ে বসেন চাঁদপুর জেলার স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় কর্মরত কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী।পরবর্তীতে রাজীবের বাড়িতে গিয়ে রাজীবের সৎ মা থেকে রাবেয়ার দ্বিতীয় বিবাহ সহ রাজীবের বাড়িতে অবস্থানের বিষয়টির সত্যতা মেলে। এলাকায় রাজীব -রাবেয়ার প্রেম,পরকীয়া বিয়ে অতঃপর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট।রাজীবের বাবা শরীফ উদ্দিন পাটওয়ারীও  তিনটি বিবাহ করেন।
বর্তমানে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন রাবেয়ার ভাই ল্যাব টেকনিশিয়ান রেজাউল ও তাঁর শ্বশুর।
অপরদিকে সুবিচার পেতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারেকের পরিবার।মামলায় প্রায় সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা এ পরিবারটি।কোথায় গেলে সুবিচার পাবেন তারেকের পরিবার তা তাদের জানা নেই।

Comments are closed.

More News Of This Category